Sunday 28 September 2014

(সৃষ্টিশীল লেখক/লেখিকাদের প্রতি।)

বহুদিন কোন হৃদয়স্পর্শী লেখা পড়া হয়না। না কোন অনলপ্রবাহকারী ছন্দ, না কোন মনের গতি পরিবর্তনকারী ভাবনার সমষ্টি। পরিশুদ্ধ চিন্তার অধিকারীদের কলমে এমন স্থবিরতা নেমে এল কেন?
জানি, সময় এখন উত্তপ্ত। রাজপথ এখন অধিক টানে। জানি ভাবনারা এখন শ্বাস-প্রশ্বাসের মতই বিশৃংখল। তাই বলে কলম থেমে রইবে??!!!
তাই বলে স্তিমিত হয়ে পড়বে আল্লাহ প্রদত্ত রহমত!
কেন? এ স্থীরতা কেন?

কে বলেছে যুদ্ধের ময়দানে কালি শুকিয়ে যেতে দেয়া বৈধ! কে বলেছে, চরম মুহূর্তে যবান থামিয়ে রাখা জায়েয?
তোমরা কা'ব ইবনে মালেক(রাঃ), হাসসান ইবনে সাবিত(রাঃ), লাবীদ ইবনে রাবিয়া(রাঃ)-দের কথা কেন ভুলে যাও?
পানি বেঁচে থাকার জন্য অপরিহার্য। ওহে বিশুদ্ধ পানির ঝরণারা! যদি তোমাদের কলকল ধ্বনিতে প্রবাহিত ছন্দের প্রবাহ স্থবির হয়ে যায়, তবে কি সাহিত্য পিয়াসীরা তৃষ্ণা মেটানো বন্ধ করবে? তারা কি অপবিত্র জলধারায় শূণ্য হৃদয় পূর্ণ করার প্রয়াস চালাবে না? কেন নিজেদের স্থান ছেড়ে দিচ্ছো?!
তোমাদের ছেড়ে দেয়া স্থান পূর্ণ হবে অপবিত্র, নোংরা জলে। তাওহীদের পয়গামে পড়বে আবরণ।

জানো!

"হযরত আমর ইবনে শারীদ (রা) তাঁর পিতা থেকে বর্ণনা করেন যে, তিনি (শারীদ) বলেন, আমি একদা রাসূলুল্লাহ (সাঃ)-এর সাওয়ারির পেছনে আরোহণ করলাম। তখন রাসূল (সাঃ) আমাকে প্রশ্ন করলেন, উমাইয়া ইবনে আবু সালতের কোনো কবিতা তোমার মুখস্ত আছে? আমি উত্তরে বললাম, হ্যা। রাসূল (সাঃ) বললেন, তা আবৃত্তি করো। তখন আমি একটি পঙক্তি আবৃত্তি করি। তিনি বললেন, আরো আবৃত্তি করো। অতঃপর আমি আরেকটি আবৃত্তি করি। এবারও রাসূল (সাঃ) বললেন, আরো আবৃত্তি করো। এভাবে আমি শেষ পর্যন্ত তাঁকে একশটি পঙক্তি আবৃত্তি করে শোনালাম।" (মুসলিম)

"হযরত বারা ইবনে আযেব (রাঃ) হতে বর্ণিত। তিনি বলেন, নবী করীম (সাঃ) বনী কুরায়যাকে অবোরোধের দিন হাসসান ইবনে সাবেত (রাঃ)-কে আদেশ করেন, তুমি মুশরিকদের বিরুদ্ধে নিন্দাসূচক কবিতা আবৃত্তি কর, নিশ্চয়ই জিবরাঈল তোমার সাথে আছেন। আর রাসূলুল্লাহ (সাঃ) হাসসানকে সম্বোধন করে বলতেন, তুমি আমার পক্ষ হতে তাদের জবাব দাও। [রাসূল (সাঃ) হাসসানের জন্য দোয়া করলেন] হে আল্লাহ! তুমি জিবরাঈলের মাধ্যমে তাকে সাহায্য কর।" (বুখারী ওমুসলিম)

"হযরত কা'ব ইবনে মালেক (রাঃ) হতে বর্ণিত। তিনি নবী (সাঃ)-কে বললেন, নিশ্চয়ই আল্লাহ তায়ালা কবিতা সম্পর্কে যা অবতীর্ণ করার তা অবতীর্ণ করেছেন। অতঃপর নবী করীম (সাঃ) বললেন, নিশ্চয়ই মুমিন তাঁর তলোয়ার ও যবান দ্বারা জেহাদ করে। সে মহান সত্তার শপথ, যার হাতে আমার প্রাণ! তোমরা কাফেরদেরকে তেমনি ভাবে কবিতা দ্বারা আঘাত করে থাকো, যেভাবে তীর দ্বারা আঘাত করা হয়।" (শরহে সুন্নাহ)

এরপরও কি করে থেমে রও? ওহে আল্লাহর রহমতের অধিকারীরা, বাহু এখনো নিশ্চল যে??!!!

*পাদ টীকাঃ কিছু মানুষ এত সুন্দর করে মনের ভাব ফুটিয়ে তোলেন যে, আলহামদুলিল্লাহ বলতেই হয়। যারা তাদের লক্ষ্য সম্পর্কে সচেতন। কিন্তু তারাই কি করে চুপ থাকে? তারাই কি করে সাংস্কৃতিক বিপ্লবকে খাটো করে দেখে।
কবি মতিউর রহমান মল্লিক চাচার একটা ঘটনা একবার শুনেছিলাম। একটা কাজে তাঁর বাসায় গিয়েছিলেন কয়েকজন চাচা। তাঁরা যখন ফিরে আসছেন, তখন তিনি মুঠি করে কিছু চাল খেতে দিয়ে বিনম্র কন্ঠে বললেন, "মেহমানকে খালি মুখে বিদায় করতে নেই। আপনাদের খালি মুখে কিভাবে বিদায় দিই?" (বাস্তবে তিনি এমনই সাদাসিধে মানুষ। এমনই দেখেছি তাঁকে...।)
এইরকম একজন মানুষ সাহিত্য-সংস্কৃতির জন্য কি পরিমাণ করে গেছেন সেটা তাঁর হাতে তৈরী শিল্পিগোষ্ঠীর অফিসে গেলে টের পাওয়া যায়। টের পাওয়া যায় তাঁরই প্রচেষ্টায় লক্ষাধিক টাকায় নির্মিত অডিটোরিয়ামে পা রাখলেও।
কতইনা সমৃদ্ধ হৃদয়ের অধিকারী ছিলেন তাঁরা! //

পৃথিবীর অনেকরকম নেশার মধ্যে লেখালিখি একটা। জাত লেখক হলে কোনো না কোনদিন কাগজ আর কালির কারাগারে আটকা পড়বেনই। সে লেখালেখি কিন্তু ফেইসবুকের স্ট্যাটাস লেখা নয়! সে লেখা হল, আপনার মৌলিক কিছু সৃষ্টি। আপনার পৃথিবীর সেরা কিছু বাক্য। যেটা একমাত্র আপনিই এই পৃথিবীকে দিতে পারেন।

কলম হচ্ছে সবচেয়ে শক্তিশালী হাতিয়ারগুলোর একটা। সস্তা কালির সাধারণ ক'টা শব্দের বুননও সহস্র হৃদয় ক্ষত-বিক্ষত করতে পারে, আবার ক্ষতস্থানের উপশমও হতে পারে। এর শক্তি সম্পর্কে যে সমাজ যত বেশি সচেতন, সে সমাজ তত বেশি আধুনিক। শুধু এ হাতিয়ারকে ব্যাবহার করা শিখতে হয়।
নিজের স্থানটুকু অর্জন করে নিতে হয়।

1 comment: