Sunday 28 September 2014

ইথারে মিলিয়ে গেল আকাশের ঘ্রাণ
শোকের আতুড়ে ফের ফেরা নিস্প্রাণ। 
ক্লান্তি না আসুক ভগ্ন পাঁজরে,
এলোমেলো স্পন্দন ঝরুক অঝোরে। 
ক্লান্তি না আসুক,
ক্লান্তি না আসুক,
শেষের কবিতাখানি পড়বার আগে...
অশেষের শেষ কথা লেখা থাক লোনা দাগে। 

05,02,14
(সৃষ্টিশীল লেখক/লেখিকাদের প্রতি।)

বহুদিন কোন হৃদয়স্পর্শী লেখা পড়া হয়না। না কোন অনলপ্রবাহকারী ছন্দ, না কোন মনের গতি পরিবর্তনকারী ভাবনার সমষ্টি। পরিশুদ্ধ চিন্তার অধিকারীদের কলমে এমন স্থবিরতা নেমে এল কেন?
জানি, সময় এখন উত্তপ্ত। রাজপথ এখন অধিক টানে। জানি ভাবনারা এখন শ্বাস-প্রশ্বাসের মতই বিশৃংখল। তাই বলে কলম থেমে রইবে??!!!
তাই বলে স্তিমিত হয়ে পড়বে আল্লাহ প্রদত্ত রহমত!
কেন? এ স্থীরতা কেন?

কে বলেছে যুদ্ধের ময়দানে কালি শুকিয়ে যেতে দেয়া বৈধ! কে বলেছে, চরম মুহূর্তে যবান থামিয়ে রাখা জায়েয?
তোমরা কা'ব ইবনে মালেক(রাঃ), হাসসান ইবনে সাবিত(রাঃ), লাবীদ ইবনে রাবিয়া(রাঃ)-দের কথা কেন ভুলে যাও?
পানি বেঁচে থাকার জন্য অপরিহার্য। ওহে বিশুদ্ধ পানির ঝরণারা! যদি তোমাদের কলকল ধ্বনিতে প্রবাহিত ছন্দের প্রবাহ স্থবির হয়ে যায়, তবে কি সাহিত্য পিয়াসীরা তৃষ্ণা মেটানো বন্ধ করবে? তারা কি অপবিত্র জলধারায় শূণ্য হৃদয় পূর্ণ করার প্রয়াস চালাবে না? কেন নিজেদের স্থান ছেড়ে দিচ্ছো?!
তোমাদের ছেড়ে দেয়া স্থান পূর্ণ হবে অপবিত্র, নোংরা জলে। তাওহীদের পয়গামে পড়বে আবরণ।

জানো!

"হযরত আমর ইবনে শারীদ (রা) তাঁর পিতা থেকে বর্ণনা করেন যে, তিনি (শারীদ) বলেন, আমি একদা রাসূলুল্লাহ (সাঃ)-এর সাওয়ারির পেছনে আরোহণ করলাম। তখন রাসূল (সাঃ) আমাকে প্রশ্ন করলেন, উমাইয়া ইবনে আবু সালতের কোনো কবিতা তোমার মুখস্ত আছে? আমি উত্তরে বললাম, হ্যা। রাসূল (সাঃ) বললেন, তা আবৃত্তি করো। তখন আমি একটি পঙক্তি আবৃত্তি করি। তিনি বললেন, আরো আবৃত্তি করো। অতঃপর আমি আরেকটি আবৃত্তি করি। এবারও রাসূল (সাঃ) বললেন, আরো আবৃত্তি করো। এভাবে আমি শেষ পর্যন্ত তাঁকে একশটি পঙক্তি আবৃত্তি করে শোনালাম।" (মুসলিম)

"হযরত বারা ইবনে আযেব (রাঃ) হতে বর্ণিত। তিনি বলেন, নবী করীম (সাঃ) বনী কুরায়যাকে অবোরোধের দিন হাসসান ইবনে সাবেত (রাঃ)-কে আদেশ করেন, তুমি মুশরিকদের বিরুদ্ধে নিন্দাসূচক কবিতা আবৃত্তি কর, নিশ্চয়ই জিবরাঈল তোমার সাথে আছেন। আর রাসূলুল্লাহ (সাঃ) হাসসানকে সম্বোধন করে বলতেন, তুমি আমার পক্ষ হতে তাদের জবাব দাও। [রাসূল (সাঃ) হাসসানের জন্য দোয়া করলেন] হে আল্লাহ! তুমি জিবরাঈলের মাধ্যমে তাকে সাহায্য কর।" (বুখারী ওমুসলিম)

"হযরত কা'ব ইবনে মালেক (রাঃ) হতে বর্ণিত। তিনি নবী (সাঃ)-কে বললেন, নিশ্চয়ই আল্লাহ তায়ালা কবিতা সম্পর্কে যা অবতীর্ণ করার তা অবতীর্ণ করেছেন। অতঃপর নবী করীম (সাঃ) বললেন, নিশ্চয়ই মুমিন তাঁর তলোয়ার ও যবান দ্বারা জেহাদ করে। সে মহান সত্তার শপথ, যার হাতে আমার প্রাণ! তোমরা কাফেরদেরকে তেমনি ভাবে কবিতা দ্বারা আঘাত করে থাকো, যেভাবে তীর দ্বারা আঘাত করা হয়।" (শরহে সুন্নাহ)

এরপরও কি করে থেমে রও? ওহে আল্লাহর রহমতের অধিকারীরা, বাহু এখনো নিশ্চল যে??!!!

*পাদ টীকাঃ কিছু মানুষ এত সুন্দর করে মনের ভাব ফুটিয়ে তোলেন যে, আলহামদুলিল্লাহ বলতেই হয়। যারা তাদের লক্ষ্য সম্পর্কে সচেতন। কিন্তু তারাই কি করে চুপ থাকে? তারাই কি করে সাংস্কৃতিক বিপ্লবকে খাটো করে দেখে।
কবি মতিউর রহমান মল্লিক চাচার একটা ঘটনা একবার শুনেছিলাম। একটা কাজে তাঁর বাসায় গিয়েছিলেন কয়েকজন চাচা। তাঁরা যখন ফিরে আসছেন, তখন তিনি মুঠি করে কিছু চাল খেতে দিয়ে বিনম্র কন্ঠে বললেন, "মেহমানকে খালি মুখে বিদায় করতে নেই। আপনাদের খালি মুখে কিভাবে বিদায় দিই?" (বাস্তবে তিনি এমনই সাদাসিধে মানুষ। এমনই দেখেছি তাঁকে...।)
এইরকম একজন মানুষ সাহিত্য-সংস্কৃতির জন্য কি পরিমাণ করে গেছেন সেটা তাঁর হাতে তৈরী শিল্পিগোষ্ঠীর অফিসে গেলে টের পাওয়া যায়। টের পাওয়া যায় তাঁরই প্রচেষ্টায় লক্ষাধিক টাকায় নির্মিত অডিটোরিয়ামে পা রাখলেও।
কতইনা সমৃদ্ধ হৃদয়ের অধিকারী ছিলেন তাঁরা! //

পৃথিবীর অনেকরকম নেশার মধ্যে লেখালিখি একটা। জাত লেখক হলে কোনো না কোনদিন কাগজ আর কালির কারাগারে আটকা পড়বেনই। সে লেখালেখি কিন্তু ফেইসবুকের স্ট্যাটাস লেখা নয়! সে লেখা হল, আপনার মৌলিক কিছু সৃষ্টি। আপনার পৃথিবীর সেরা কিছু বাক্য। যেটা একমাত্র আপনিই এই পৃথিবীকে দিতে পারেন।

কলম হচ্ছে সবচেয়ে শক্তিশালী হাতিয়ারগুলোর একটা। সস্তা কালির সাধারণ ক'টা শব্দের বুননও সহস্র হৃদয় ক্ষত-বিক্ষত করতে পারে, আবার ক্ষতস্থানের উপশমও হতে পারে। এর শক্তি সম্পর্কে যে সমাজ যত বেশি সচেতন, সে সমাজ তত বেশি আধুনিক। শুধু এ হাতিয়ারকে ব্যাবহার করা শিখতে হয়।
নিজের স্থানটুকু অর্জন করে নিতে হয়।

জীর্ণ শীতের স্বাক্ষর রয়ে যায়
কংকালসার গাছের বাহুতে।
ঝরাপাতাদের বিচ্ছেদ পোড়ায় কি তাকে?

শরীর ফুড়ে জন্ম নেয়া সবুজাভ প্রেম
শূণ্য থেকে হয়ে ওঠা অনুসঙ্গ
গাঢ় সবুজের সাবালক সৌন্দর্য,
শীর্ণ দেহের অপূর্ণতা ঢাকতে বড় প্রয়োজন ছিল তার।

তাই তরুণ সবুজেরাও স্বর্বস্ব দিয়ে
তার শরীর ভরে মেখে দিল কোমলতা।
রুক্ষতাকে ঢেকে দিল
প্রকৃতির সব সুন্দর।

সবটুকু দখল করে নেয়া সবুজেরা একদিন হুট করে বুড়িয়ে গেল।
বুড়ো সম্পর্কদের মত টুপ করে
একদিন ছুটে গেল গ্রন্থন তাদের।
এত সহজে, এত অবলীলায় একটুকরো হাওয়া
ভেঙ্গে দিল ষড়ঋতুর সংসারী প্রেম যে,
শুষ্ক মূল নিয়ে নগ্ন দেহে
ঠায় দাড়িয়ে থাকা গাছটা নির্লজ্জের মত
কেবল স্বীয় দীনতার সাক্ষী হয়ে রইল।

বিচ্ছেদের যাতনা প্রকাশে
মানুষদের মত তাদের কোনো ভাষা নেই যে!
কবিতা কেউ কাউকে শেখাতে পারেনা।
কবিতা শুধু কবিদের।
কিন্তু তবু, কেউ কেউ কবিতা শেখে,
কবিদের কবিতা পড়ে পড়ে কবিতায় কবরস্থ হয়।
সমাধির ভেতরের অন্ধকার কেউদেরকে কবিতা শিখিয়ে দেয়।
সেইসব কবিতায় যে কত অমাবশ্যা, কত পূর্ণিমা বন্দী থাকে,
শুধু আঁধারের কবি জানে।
সেই কবেকার মেঘলা দুপুর
আষাঢ়ে বিকেল হয়ে ভিজিয়ে দিল রাত্রির জোছনা...
আমি কেবল পাঁজরের খাঁচা আটকে লুকিয়ে রইলাম।
কিচ্ছু বলা হলোনা...
জন্মদাগটুকু আড়াল করতে আমি অমাবশ্যা হয়েই কাটিয়ে দিলাম এবারের ষড়ঋতু...
কত কথা যে কত হাজারবার বিষকাঁটা হয়ে আটকে রইল কন্ঠনালীর বুকে...
কত কথা যে থমকে দিল পাগলা গতির সময়...
কেবল কথাগুলোর ভারে আমি উড়ে যেতে পারলাম না ঝড়ের পূর্বক্ষণে...
হায় আমার অপরিণত পাখাজোড়া...
কবে তাতে পালক গজাবে...
আর কবেইবা প্রাপক চাইবে চিঠি?
আর কবেইবা আমি ত্যাগ করবো বাসি নিঃশ্বাসটুকু?
কবে?
আমাতে অমন কামনা জাগিয়োনা;
মায়ার তন্ত্রীতে বেধে জন্ম
দিয়োনা নতুন প্রেমের গান।
আমাতে অমন
কঠোরতা চিরে ব্যাকুলতা খুজোনা;
অন্তরিক্ষের রক্তে ভিজিয়ে দিয়োনা

শুকিয়ে যাওয়া হৃদকমল।

মাটির সোদা গন্ধ যে কি তীব্র মাদক!
তাতে আমায় আর মোহাচ্ছন্ন করোনা...
হিংস্র প্রেমের নখরে বিক্ষত হ্ণদয়ে
পুরোনো আবেগের নির্যাস খুজোনা বৃথা।

আমি তো সেই কবেই সামাজিক হয়েছি!
আমি তো সেই কবে থেকে
পৃথগন্ন প্রকৃতির বহিষ্কৃত বুনো শ্বাস।
আমি তো সেই কবে থেকেই
শেকড় গেড়েছি ইট-সুরকির দেয়ালে।
স্বপ্নের রোশনাইতে শ্যাওলা জমেছে আমার।
আনাড়ী আবেগের উচ্ছাস গত
হয়েছে কবে...!

আমাতে অমন আস্পর্ধা জাগিয়োনা ফের!
যাতে তুলতুলে অনুরাগ
রঙচঙে পাখা মেলে মেকি মায়াতে।
চড়ুইয়ের চঞ্চলতা আর না ফিরুক আমাতে।
আমি মানুষ হতে ব্যস্ত এখন....
প্রচন্ড অভিমানে নিজেকে বোঝাই,
অভিমান করার কোনো অধিকার আমার নেই....
অলিখিত অভিমান লুকিয়ে রয় চোয়ালের দৃঢ়তায়,
আমার দূর্বল পাঁজরের হাড়ে
আমার শীর্ণ হাতের মুষ্ঠিতে,
আমার রুক্ষ ঠোঁটের ফাঁকে,
আমার বিষাক্ত কলজের একদম ভেতরটায়...
২৭.১০.১৩
এইসব রাত্রিরা কেমন যেন,
ভঙ্গুর মরা ডালটার কাধে নিশাচর বাদুড়ের মত চুপচাপ ঝুলে আছে!
জমাট স্তব্ধতায় ক্ষণিকের জন্য মনে হয়,
এই আমরা বুঝি এমন স্থির হয়ে আছি!
এই বুঝি অবসর নিল টেবিল ঘড়ির কাটা তিনটে!
নাইটকোচের ভারী চাকার ক্যাচক্যাচে আর্তনাদ,
আর মালবাহী গাড়ির আত্মা কাপানো হর্ণে সম্বিত ফিরে পাই।
নাহ, জীবন বড় গতিময়...
"আর, তোমার কষ্টেরা কখনো আমার হবেনা।
তোমার মধ্যকার প্রলয়ঝড় ও আমায় ছোবেনা।
তোমার আকাশ, আমার আকাশ অনেক দূরের পথ,
এতটা পথ পেরুতে তুমি আর কোনদিন পথিক হবেনা।"

বিস্ময় দৃষ্টিতে চেয়ে থাকে 'তুমি'
'আমি'টা তো এই সামনেই!
কোথায় কত দূর?
হাত বাড়ালেই ছোয়া যায় অস্তিত্বের উষ্ণতা!

'আমি' হাসে বিমূঢ় 'তুমি'র বোকা চাহুনিতে।
আমি-তুমিদের দূরত্ব কি চাইলেই মিটে যায়?
'আমরা হওয়া কি এতই সহজ?!
নিজেকে চেনা যায় একান্তে, নিস্তব্ধতায়...
যখন সঙ্গী হয়না ছায়াও।
ঘড়ির টিকটিক, বুকের ধুকপুক আর শিশিরের টুপটাপ
যখন মিলেমিশে একাকার হয়।
অচেনাকে চিনতে চাইনা বলে
মধ্যরাতে খুলে বসি ঘুমন্ত জানালা,
শার্সি গলে ঢুকে পড়া লাইটপোস্টের ধোয়াটে আলোর সাথে
চোখাচোখি হয় আবার...
ভোতা পেন্সিল, পুরোনো খাতার শেষ পাতা,
আর দুর্বোধ্য অনুভূতিরা আবারো একাকার হয়।
পাতাভরা অনুভূতিদের মাঝে,
বড় কাতর চোখে আমি নিজেকে দেখি তখন...।
০২,০২,১৪
রাত-২.০০টা
আর আমার কিছু গল্প আছে বারবার হেরে যাওয়ার
চেনা শহরের আগল ভেঙ্গে বারংবার হারিয়ে যাওয়ার।
কোনো নতুন সূর পাবো,
কোনো অচিন রঙে অবাক হবো,
কোনো নতুন পথে পথ হারাবো,
এ খেয়ালিপনায় কতবার যে
দম আটকানো নিয়মগুলোর চোখরাঙ্গানিকে
বুড়ো আঙ্গুল দেখিয়ে পালিয়ে গেছি!

আমি তো আমার মত করে
চোখ মেলে চাইতে আর কাউকে দেখিনি।
আর কা-উকে ব্যস্ত শহরের মাঝ রাস্তায়
দাঁড়িয়ে আকাশের মন বুঝতে দেখিনি!
আমি খুব বুঝি, আমার রঙ আলাদা।
তাই আমার চারদেয়ালের একটা মিষ্টি বাড়ির স্বপ্ন আসেনা,
সুন্দর একটা গাড়ির স্বপ্ন আসেনা,
প্রিয়তমের হাতে হাত রেখে
ছোট্ট আয়ুর জীবনটা উড়িয়ে দেয়ার অভিলাষও জাগেনা।
আমি আমার স্বপ্নের একটা অংশ
কেবলই ঝাপসা দেখি......
কতবার নোনতা পানিতে ধুয়ে দিলাম
হতচ্ছাড়া স্বপ্নদের!
কতবার প্রাণপনে চোখের পাতা চেপে ধরে
দেখতে চাইলাম ঘাসফড়িংদের ওড়াওড়ি!
কিছুতেই পারিনা...

আমি কেন মানুষের মত করে ভাবতে পারিনা?
আমি কেন এখনো দৃঢ় হয়ে মাটিতে পা রাখতে পারিনা?
কেন নিজেকে এ অবিশ্রান্ত শহরে পরগাছা মনে হয়?
কেন নাড়ির রক্তে মেশানো মানুষগুলোকে
নিজের শেকড় ভাবতে পারিনা?
কেন?

আমার দেড়যুগ ধরে জমে ওঠা ‘কেন’দের
কোন জবাব খুঁজে পাইনা।
পাইনা বলেই আমি এত এতবার হেরে যাই।
পাইনা বলেই এমন হুটহাট হারিয়ে যাই।
পাইনা বলেই সুতো ছেড়া ঘুড়ির মত বাউন্ডুলে জীবন...

সত্যি বলতে কি!
আমারও কখনো সবার মত স্বপ্ন দেখতে ইচ্ছে করে,
আমারও কখনো বলতে ইচ্ছে করে,
“জানো, আমার হৃদপিন্ডটাও মাঝে মাঝে ভীষণ জোরে ধুকপুক করে...!”
০২,০২,১৪
বালিকা, তোমার ছটফটে ইচ্ছেদের ডানা ঝাপটানোর শব্দ
ব্যাস্ত শহরের অপর প্রান্তে নিছক ছেলেমানুষি বলে বাতিল হয়ে যায়।
আর তুমি কিনা একটুখানি আবেগের কাছে বেঁচে দিলে লজ্জাবতী আঠারোর দিনগুলো!
বালিকা, রাত্রির অন্ধকার তোমার অত উষ্ণ অভিমান নিজের কাছেই রাখে।
আকাশ তোমার জন্যে কাঁদেনা।
তুমি তার কেউ নও।
একটা দমকা হাওয়া এগিয়ে আসতেই
লালচে পাতাগুলো ঝাপিয়ে পড়ল সোৎসাহে
পথের শিশু বুনো ফুলগুলোর রেনু ছড়িয়ে পড়ল দিগন্তে
সদ্য চোখ ফোটা চড়ুই ছানাগুলো চেচিয়ে উঠল মিছে আতংকে
হৃদয়ের নিস্তব্ধ জলাশয়ে একটা অবয়বও যেন খানিকটা নড়েচড়ে উঠল...
০৭,০১,১৪
দুপুর
সেদিন বর্ণালী নামের মেয়েটা
ওর একগাদা কষ্ট বের করে বলল,
দ্যাখ দ্যাখ, আমার কত্ত কত্ত কষ্ট!
সব মানুষেরই নাকি থাকে।
-তাই নাকি? আমি বললাম।
-হুম তাইতো।
সাদা কষ্ট, কাল কষ্ট
ছোট কষ্ট, বড় কষ্ট...

তারপর আমিও একদিন সময় করে বসলাম,
আমার ধুলো জমা, অগোছালো হৃদয় নিয়ে।
ভাজ খুলে হাতড়ে হাতড়ে
খুঁজে পেলাম ক'মুঠ কষ্ট।
কত্ত দিনের পুরোনো...
জৌলুসহীন, রংচটা।
পুরোনো দিনের স্বৃতি হয়ে
ফাঁক-ফোকরে আটকে আছে।
দীর্ঘদিনের স্পর্শহীনতায় ক্যামন নেতিয়ে পড়েছে...।
আমি মন বাড়িয়ে ছুই সংকোচে
বর্তমানের স্পর্শে অতীতের আমি যেন
আবার হীমঘর থেকে বেরিয়ে চোখ মেলে চাই।
সে চোখের শীতলতায়
আমার সমগ্র বর্তমান হীম হয়ে আসে।
অন্ধকারের চামচিকা যেমন
আলো দেখলে ছুটে পালায়,
আমি সেই পুরোনো
আমাদের থেকে পালিয়ে থাকি।
কৈফিয়তের আতংকে,
দলছুট হবার ভয়ে;
রঙচঙা একটা মুখোশে
কাপুরুষ সত্তাটাকে ঢেকে রাখি।

/অস্বীকার

কখনো আকাশের আর্তনাদে,
বাতাসের উন্মত্ত অস্থিরতায়
মৌন হৃদয় চমকে ওঠে!

আকাশটায় আর উদারতা নেই কেন?
বাতাসে নেই কেন চীরায়ত শীতলতা?
গন্ধরাজের শুভ্রতায় কেন লালের স্পর্শ!
মুয়াজ্জিনের কন্ঠে কেন এত ক্লান্তি!
কেন মেহগনির কচি পাতাগুলোয় আর মুগ্ধতা নেই?
বৃষ্টি ধোয়া কার্ণিশে নেই পুরোনো স্নিগ্ধতা!
নিঃস্ব চোখজোড়া কোথাও আর মমতা খুজে পায়না
দরাজ কন্ঠে গাওয়া গান শুনে আর মন নেচে ওঠেনা
মাটির সোদা গন্ধে প্রাণ ভরেনা আর...

আমি মূক, বধির অন্ধ হয়ে গেছি।
আমার কবিত্ব মরে গেছে,
ভাবালুতা হারিয়ে গেছে
আমি আর বিশুদ্ধ বাতাস খুজে পাইনা কোথাও
আমার আত্মার অক্সিজেন ফুরিয়ে গেছে কবেই।
উফ্‌! কি বিষাক্ত পৃথিবী!

অকুতোভয় কিশোর, আর
শীর্ণদেহী বৃদ্ধের প্রবীণ রক্ত ও
ধুয়ে দিতে পারেনি এ পংকিল পৃথিবীর পাপ...

তাইতো চমকে উঠি!
আকাশটা এত ছোট হয়ে আসে কেন?
বাতাসে কেন এত দীর্ঘশ্বাস!

অবশেষে একদিন...,

অবাক চোখে দেখি কতিপয় উন্মাদকে,
রাজপথ দাপিয়ে বেড়াচ্ছে আত্মার অক্সিজেনের খোঁজে!
যাদের সিনার সম্মুখে আজরাইল
বাতাস অবরুদ্ধ রক্তগরম স্লোগানে.....

উন্মাদদের উন্মাদনা বেড়ে যায়,
আজরাঈলের চোখে চোখ রেখে হাসে মৃত্যুঞ্জয়ী হাসি।

মানবিকতার উর্ধে উঠে কি করে পেলি জান্নাতের খুশবু?
ও চোখে খোদার নূরের ঝলকানি যে!
তোরা কি হুরেদের মাতাল ছন্দ শুনেছিস?!
ঐ শুকনো ঠোঁটের হাঁসিও কেন এতো নির্ভিক!

আল্লাহর মেহমানদের অভ্যর্থনায় আজরাঈল কাটায় ব্যস্ত সময়
আর আমরা হতভাগারা পড়ে রই এ অসুস্থ্য জমিনে...
দেয়াল ঘড়ির মত একঘেয়ে সূরে চলতে থাকা
হৃদপিন্ডটার উচ্ছাস হঠাৎ
টুনটুনির হৃদস্পন্দনের মত তীব্র হয়ে ওঠে।
টহল গাড়ির সাইরেন উদ্দীপিত করে
নিভে আসা আগুনকে
থেমে আসা বিপ্লবকে
স্তিমিত স্ফুলিঙ্গকে।

ওই মাংসাশী প্রাণীগুলোর হিম্মত দেখে আমি অবাক হয়ে যাই!
সমাজটা ভরে গেছে ওৎ পেতে থাকা চিতা,
অন্যের মুখের খাবারে ভাগ বসানো হায়েনা আর
উচ্ছিষ্টের আশায় থাকা শকুনে।

ওদের নখরে লেগে থাকা রক্তে মেশকের তীব্র সুগন্ধি পাই আমি।
সে তীব্র সুগন্ধি আমার মস্তিষ্কের কতক স্নায়ুদের স্থবির করে দেয়।
যেখানে আমার একগাদা স্বপ্ন রাখা ছিল!
যে স্বপ্নে একটা বাধানো ফ্রেম,
রঙের গন্ধওয়ালা ছোট্ট চারদেয়ালের খাঁচা,
খাচায় বন্দী মুখোমুখি চোখগুলোতে প্রেমাসক্ত রঙচ্ছটা।

আমার আঙ্গুলের ফাঁকে খেলা করতে থাকা
 
জোছনাগুলোকে প্রাণপনে চেপে ধরি।
মুষ্টিবদ্ধ হাত আর দৃঢ় চোয়ালে সঞ্চিত ক্রোধ
লাভার ন্যয় ফুটতে থাকে।

প্রয়োজনে আরেকটা বদর প্রান্তর হোক!
নকীবের বজ্র বাহুর দৃঢ় শপথে
শীর্ণ সৈন্যের দেহে আসুক আলীর তাকত।
সফেদ ফুল,সবুজ ফাঙ্গাস,পিচঢালা রাস্তা রঞ্জিত হোক
বিশুদ্ধ খুনের লালে।
ফেরেশতার হলুদ পাগড়িতে লেখা থাক
 
আরো একটি কাংখিত বিজয়।।

১১.১১.১৩
রাত- ৩.২০
তোমার আর আমার অমিলের মিল নিয়ে বাদানুবাদ
এই ছেড়া শহরের ডানপিটে রাস্তায়
অভিমানে বা কপট রাগে
ব্যস্ত যানের হাকাহাকির তোয়াক্কা করিনা আর।
দমকা হাওয়ার স্পর্শ পুলক জাগায় না
ফেরারী পাখির মুখরতায় ও উত্তাপে স্থিতি আসেনা
আর, সন্ধ্যা তারারা জ্বলে ওঠার আগেই যে
কুৎসিত হলদে জোছনা রাজপথ দখলে নেয়,
তার স্পর্শ আমাকে আরো আরো বিষন্ন করে দেয়।
কেন অযথা এত এত অনুভূতি জাগে,
যার গভীরতা খুঁজে কোন কূল পাইনা আমি,
আমি সত্যিই বুঝে উঠতে পারিনা...

তোমার ফিরতি ডাকে আমি বিরক্ত হই
সত্যিই ভীষণ বিরক্তি আসে আমার।
তোমার কি খুব খেলনার অভাব হে!

/পথচারী
কার অপরিহার্যতা আছে জীবনে
আর কে নিতান্তই তুচ্ছ,
তা নির্বাচনে বরাবর ভুল হয় আমার।
কেন যে মরিচিকার ঔজ্জ্বল্যে চোখে ধাঁধা লাগে,
কেন যে চেনা হৃদয়ের নিরব প্রস্রবণ টের পাইনা,
কেন যে আগন্তুকেরা নিঃশ্বাসের মত আপন হয়ে ওঠে,
আর চেনা মানুষের হাত ছুটে যায় মাঝ রাস্তায়,
খেয়ালি হৃদয়ে সে ফোঁকর ধরা দেয়না...

তোমাদের চুপচাপ প্রস্থান টের পাই,
অতটুকু বুঝতে পারি বটে!
কিন্তু চোখ তুলে ডাকবো,
মুখ ফুটে বলবো, ‘অবিযুক্তই থাকি না!’
তা আর হয়ে ওঠে না...।
কেউ আমাকে বাঁধতে পারেনি,
আমিও বাঁধিনি কাউকে।
বাধা পড়ার মত সভ্য যে আর হওয়া হলনা!
তাই প্রস্থান হাসিমুখে মেনে নিই।
মানব হৃদয়গুলো থেকে সামলে রাখি নিজেকে।
তোমাদের হৃদয়ের ক্ষত আর বড় না হোক,
দীর্ঘশ্বাসগুলো আর ভারী না হোক,
হঠাৎ-এর মুখোমুখিতে ফের অভিমান না জমুক,
তাইতো এ প্রচ্ছন্ন দুরত্ব!

আমার বুকে হাত রেখে স্পন্দনের গতি বুঝতে চেয়োনা।
ভাবলেশহীন চোখে চোখ রেখে ভেতরটা পড়তে যেয়োনা।
ওখানে যে কি ভয়ানক অমাবশ্যা এখন!!
২০,০১,১৪
সময়গুলো যেন শেষ বেলের শব্দের মত হুড়মুড়িয়ে পাশ কাটিয়ে গেল!
সেই যে চোখ জুড়ে কৌতুহল, অনভ্যস্ত স্কুল বালিকা,
দলবেধে ছুটে বেড়ানো ক্যান্টিন থেকে লাইব্রেরী
ধানমন্ডি লেক থেকে নিউমার্কেটের চুড়ির দোকান।
কিংবা স্টার কাবাবের কোনার টেবিলে ক্লান্তিহীন আড্ডা...
নিরস লেকচারের ফাঁকে কারো জানালা পেরিয়ে আকাশ ছোয়া,
ভাবুক কারো খাতাজুড়ে লেখা কবিতা দুছত্র,
টেবিলে মাথা রেখে অসমাপ্ত ঘুমের ক্লান্তিতে কাতর বালিকা
কারো সিরিয়াস হাতে কলম চালানো খাতার সফেদ পাতায়,
কারো মনের মত স্কেচে আঁকা স্বপ্নপুরুষ।
অথবা অফ পিরিয়ডে হেড়ে গলায় গান ধরা এক ঝাক উচ্ছলতা
গসিপের বিষয় হওয়া জনৈক নবাগতা
ভাঙ্গা হ্ণদয়ে বিষন্ন বালিকার একাকিত্ব
গুমড়ে মরা শোক,
আর সদ্য প্রেমে পড়া মেয়েটার
চোখভরা প্রচ্ছন্ন আবেগ।
বেঞ্চের বুক চিরে রেখে যাওয়া স্বাক্ষর, অমুক+তমুক...
সব যেন মিলেমিশে একাকার সেই কোণার ক্লাসরুমে।
আর, আমাদের হঠাৎ বড় হওয়া,
আবেগ-অনুভূতি মাড়িয়ে নিরন্তর ছুটে চলতে শেখা।
তবু গতিময় সময়ে দু'একটা পথহারা প্রজাপতি...
আর পড়ন্ত বিকেলে গোধুলির রঙ্গে রঙ্গিন শুভ্র পায়রাদের নব যুদ্ধের প্রস্তুতি...। 
হে জীবন,
তুমি ঘাস-পাতার ন্যয় অযত্নে বাড়িয়াছো
শত হৃদয়ের মায়া অজ্ঞাতে ছাড়িয়াছো
তোমাকে রঙ্গিন প্রজাপতি নহে,
তেজপাতাই লোকে কহে।

হে জীবন,
তুমি কেন আমায় মোহাচ্ছন্ন করিলে না?
ছুটিয়া যখন পালাইয়াছিলাম, বাহুতে কেন ধরিলে না?
কেন ঘড়ির কাটা এমন করিয়া আমার অনুভূতিদের মাড়াইয়া গেল
অযথা বুনো ফুলের সুবাস লইয়া হিয়া হইল এলোমেলো।

হে জীবন,
তুমি তেজপাতা
তুমি প্রাণহীন লতাপাতা
তুমি কালের শেকলে কথারে বেধে
আমারে করেছো বাকহারা।

তোমায় ত্যাজ্য করিলুম তাই।
আমাদের অপরাহ্নের সময়গুলোতে,
ফাল্গুনে হাওয়ার দাপট ছিলনা তখন।
সম্পর্কের বয়স বেড়েছিল আচম্বিতেই...
একসময় ভালবাসা, মুগ্ধতা আর মোহের পাচিল পেরিয়ে
জীর্ণতা এল তৃতীয় কেউ হয়ে।

শুভ্র ফুলের বাগান উদ্যান হয়েছে,
কোমল হাতে অঙ্কুরিত চারারা হয়েছে মহীরুহ।
কত রাঙ্গা সকাল পেরিয়ে তবেই না এল অপরাহ্ন!
যে অপরাহ্নে আরেকটা বুড়ো সম্পর্ককে মাড়িয়ে গেল পড়ন্ত রোদ্দুর।
আর, মানুষের ভেতরে মানুষেরা চুপি চুপি ঢুকে পড়ে।
পাজরের কারাগার ভেদ করে একান্ত পৃথিবীতে একান্ত হয়ে জায়গা করে নেয়।
কেউ স্থান করে নেয় সত্য হয়ে,
আর কেউ ঝুলে থাকে একটা 'কিন্তু' হয়ে.....
দুরত্ব আমাদের অস্তিত্বকে পরস্পরের কাছে করে ক্ষুদ্রতর
যেমন দূরের মানুষগুলোকে মনে হয় কড়ে আঙ্গুলের সমান...
যন্ত্রেরা দুরত্ব মেটায় না, মেটাতে পারেনা।
দুরত্ব মেটায় মানুষের মানবিক অনুভূতি...
যে অনুভূতিরা একটি মানুষকে একটি পৃথিবীর চেয়ে বড় করে দেখায়...
জানালার ওপাশে কুঁয়াশার আঁচলে জলকণার কারুকাজ
আর নেত্রজোড়ার আস্তিনে জমা শিশিরবিন্দুরা
কেমন মিলেমিশে একাকার হয়ে যায়......
কেঁপে ওঠা দীর্ঘশ্বাসে ভর করে রাজ্যের ক্লান্তি
চেনা স্পর্শের বিচ্ছেদ মিলায় কৃষ্ণপক্ষের আঁধারে।
অবসন্ন দুচোখে অবসরের আকুলতা
আর দূর্বল নিঃশ্বাসদের সমাপ্তির আবেদন......
ক্ষীণ হ্ণদস্পন্দনে তবুও
একটুখানি কামনা মিটমিটিয়ে জ্বলে...

না ফেরার অভিলাষে প্রস্থান একেকটি উষ্ণ নিঃশ্বাসের
শেষকৃত্যের বিষন্নতায় চোখ বুজে কলংকিত চাঁদ।
এ অসংলগ্ন অনুভূতির কোনো মর্মার্থ
খুঁজে পাইনা আমি
যাপিত জীবনের সমস্ত
বাস্তবতাকে শিকেয় তুলে
হ্ণদয়ের আবেদনটুকু যথার্থ শব্দের
শৃংখলে বাঁধতে
অবসন্ন চোখে, নিশ্চল হাতের ক্লান্ত
আঙ্গুলে
ধরা কয়লার পানে চেয়ে রই……
আমার একটা হ্ণদয়ভেদী ছন্দ চাই।
যে ছন্দের অক্ষর ভেদ
করে পাওয়া যাবে উষ্ণ বারুদের ঝাঝ
সে ছন্দের প্রতিটি অক্ষরে না হয়
ক্ষয়ে যাওয়া স্পন্দন থেকে আবীর
রাঙ্গা আবেগ ছুইয়ে দেবো…!
০৪,১২,১৩
তোমার হয়ত মনে হয়
যেকোনো মৌসুমেই উষ্ণতার প্রয়োজন হয়।
তাই আচম্বিতে তাকে দেখলেই তোমার কামনারা
পঙ্গপালের ন্যয় ছুটে আসে।

তোমার হয়ত মনে হয়
জীব মাত্রই জৈবিক।
তাই যৌবনের পূজারী জীবেরা শুরু থেকে শেষ অবধি
স্বর্গীয় প্রেমের নামে মর্তীয় উন্মাদনায় ডুবে রয়।

তুমি হয়ত মনে করো
জীবনের অকূল পাথারে কারো সঙ্গ বড় প্রয়োজন।
তাই একটা উষ্ণ কোমল হাত ধরতে ব্যাকুল থাকো।
প্রিয়দর্শীনীর লাবণ্যে মোহগ্রস্থ হতে চাও।

তুমি হয়ত ভাবো
জীবনের জীর্ণতায় একান্ত অঙ্গনার উচ্ছাস জরুরী।
তাই কাতর হয়ে নিঃসঙ্গতাকে অভিশাপ দিয়ে
একূল থেকে ওকূলে উদ্ভ্রান্তের ন্যয় ছুটে বেড়াও।

তুমি হয়ত জানোনা
জীবনের কিছু অবধারিত সত্য আছে।
তাই তোমার এ পৃথিবীতে আসা,
তাই তোমার লক্বব 'আশরাফুল মাখলুকাত'।

০৭,১২,১৩

বুলেটগুলো ভেদ করে একটা বুক,
ছেদ করে যায় একটা কলিজা
আর সহস্র হ্ণদয়।
আর তারপর যখন অবাঞ্চিত রুহেরা পাজর ভেঙ্গে মুক্ত হয় একেকটি বন্ধন ছিন্ন করে,
তখন কিসাস চাওয়াটা নাকি দোষের।
তখন মুখ বুজে থাকাটাই নাকি সমাধান।
সয়ে যাওয়াটাই নাকি শ্রেয়!

তবে রাস্তায় পড়ে থাক কৈশোর পেরুনো যুবকের খুন মাখা লাশ,
কংক্রিটে পড়ে থাক আজন্ম শাহাদাতের কামনা লালন করা কোনো বৃদ্ধের থ্যাতলানো দেহ,
পুরুষশূণ্য কোনো বাড়ির মেঝেতে পড়ে থাক বারো বছরের কোনো অভাগা কিশোরীর গণধর্ষিত মৃতপ্রায় দেহ।
তোমরা তাদের দেখে কুম্ভিরাশ্রু নির্গত করোনা।
তোমরা আয়েশ করে বসে দেখো,
আরেকটা লাশ আসছে,
আরেকটা ধর্ষিত ঝরা ফুল......

আর আমরা অপেক্ষা করি,
একদিন যুদ্ধের ফয়সালা আসবে,
একদিন তোমাদের প্রস্তুতি সম্পুর্ণ হবে।
অস্ত্র ধরার মত হাত হয়ত সেদিন অবশিষ্ট থাকবেনা,
স্বপ্নভরা চোখে কোনো এতিম হয়ত তোমাদের পানে চাইবেনা,
কোনো তরুণী হয়ত তোমাদের পৌরুষত্বে পুলকিত হবেনা,
তবুও তোমরা এসো,
মজলুমের জমাট রক্তে তোমাদের পদচিহ্ন রেখে যেও।


-আচ্ছা, তুই একটা অন্যরকম লেখা লিখতে পারবি?

-অন্যরকমটা কি রকম?
আমি হাসতে হাসতে বলি।

-অন্যরকম। একদম আলাদা...। নির্মল আবেগের না, বন্য প্রেমের না, কুৎসিত সমাজের না, কোনো অলিক স্বপ্নেরও না। আন্যকিছুর।

আমি হাসলাম।
-পৃথিবীতে সবাই স্রষ্টা হয়নারে, কেউ শুধুই অগ্রজের সৃষ্ট পথের শুদ্ধ চর্চার জন্য। একটা নতুন আবিষ্কারের জন্য যে অনিশ্চিত পথে বেরুতে হবে, তা সোনা খোঁজার মতই। অনুসন্ধানকারী থাকে উন্মাদ। কিন্তু শেষমেষ মারা যায় রাস্তার অনাহারী কুকুরের মত। খুব অল্পই খঁজে পায় কাংখিত জিনিস।
ওই পথে বেরুনোর দুঃসাহস নেই আমার। আমি ছাপোষা মানুষ, আষ্টে-পৃষ্ঠে বাঁধা সমাজের সস্তা নিয়মে।

-তবু, তোর মাঝে আমি দ্রোহ দেখতে পাই। তোর কবিত্বে নির্মলতার বাইরেও কিছু সত্য আছে...
তুই কি প্রাপ্তির জন্যই লিখিস? হারাতে ভয় পাস?

-কবি মাত্রই বিদ্রোহী সত্তার লালনকারী। কিন্তু ভেতরের অঙ্গারকে প্রজ্জলিত হতে সুযোগ দেবার মত দুঃসাহসী হয়না সবাই। আমি কেন লিখি জানিনা। হয়তো প্রাপ্তির লোভ আছে, তবে অপ্রাপ্তিতে আফসোস নেই। হারাতে ভয় পাইনা, হারানোর কিছু নেই বলে। তবে হারতে ভয় পাই; ক্ষুদ্র মানুষ হলেও...

-কবির আবার হার-জিত কিরে? কবিত্ব চিরায়ত। শতাব্দীর পর শতাব্দী টিকে থাকে সভ্যতা ছাড়িয়ে। কালের ঘুণপোকা তার কিচ্ছু ক্ষয় করতে পারেনা। তাহলে আর ভয় কিসে?

-কবির ভয় তো তার নিজেরই কবিত্বে! কবিত্ব কখনো কবির চেয়ে শক্তিশালী। মাকরসার নবজাতক যেমন নিজেরই মাকে খায়, তেমনি কবিত্বও কবিকে কুরে কুরে খায়। কবির পিছুটান শুধুই তার কবিতা। অজানা মোহে সব ভুলে তার কাছে ফিরে আসে। কিন্তু অবশেষে আপনসত্তাকে আর বাঁচাতে পারেনা। নিজের সৃষ্টির মাঝে বিলীন হয়ে যায়...

-বিলীন হয়ে যায়না, এর মাঝেই বেঁচে থাকে। কবিতার মাঝেই তো তার স্রষ্টার অমরত্ম! তার ভাবনার শেকড় তো তারই আবিষ্কৃত কথামালায়। কবি তো তার ছন্দ থেকে নিঃশ্বাস নেয়। তাই তো তাকে বাঁচিয়ে রাখে...

-হুম..., তা বটে, বিসর্জনের মাঝে বেঁচে থাকা। যেখানে কবির ইচ্ছে-অনিচ্ছে হয় অর্থহীন। বেঁচে থাকেনা, বাঁচিয়ে রাখে।

-তাই তো হয়। তাই তো নিয়ম। এবার বল, পারবি কিনা? লিখবি তো?!

-যদি কখনো খুঁজে পাই। যদি তা থেকে থাকে আমার ক্ষুদ্রতায়...

-আছে। আমি দেখেছি কি করে টগবগ করে ফুটছে ওটা তোর মাঝে।

-কি?
আমি সাগ্রহে জানতে চাই।

-নব্য বিপ্লবের ঔদ্ধত্য।
সে চকচকে চোখে বলে।

০৮,১২,১৩
মাঝে মাঝে নিজেকে বড় লোভী মনে হয়।
সময়ের আগে প্রাপ্তিগুলো ছুটে এল বড় অসময়ে,
প্রাপ্তির প্রতুলতা আমাকে সুখী করতে পারলনা
বরং নিরবশেষ কামনা অন্তঃকরণ দখল করে নিল। 
মহামানব তো নই,
তাই মায়ার মোহ আছে,
নিষিদ্ধের আকর্ষণ আছে,
আসক্তি আছে অপ্রিয় আবিলতায়।
তবু তো আমি মানুষ এখনো
তাই, আবেগে হঠাৎ হৃদয় ভরে।
আমার ও কখনো স্বপ্ন ভাঙ্গে,
অনুভূতিরা বাঁচে-মরে।
আমি ও অনেক তরল কষ্ট,
পাতায় পাতায় জমিয়ে রাখি,
পরাজয়ের গল্পগুলো
চুপটি করে হৃদয়ে মাখি।
চাওয়া পাওয়ার শূণ্যস্থানে অনেক স্বপ্ন
বিলীন হয়,
বাস্তবতার শেকলে রোজ বাধা পড়ে অজস্র
অনুভূতি।
জীবন স্বপ্ন দেখতে শেখায়,
ভাঙ্গতে শেখায়,
ভাঙ্গা-গড়ার এ অত্যাচার সইতে শেখায়।
আমরা একান্ত বাধ্যগত শিক্ষার্থী,
তাই অনুভূতির সংজ্ঞা রোজ পালটায়।
কেউ কেউ পুরোনো অনুভূতিকেই খুঁজে বেড়ায়
ভাঙ্গা স্বপ্নদেরই আকড়ে ধরে,
সমাজে এরা মুল্যহীন।
এরা যে অবাধ্য শিক্ষার্থী!
তাই আমরা বাধ্যগতরা আঢ়চোখে দেখি,
ওদের হেরে যাওয়া, হারিয়ে যাওয়া...
আহারে! ওরা যন্ত্র হতে পারলনা, মানুষই
রয়ে গেলো...

06,04,13
কোনো একলা পাখির আশ্রয় হতে চাইনি
আমি নিজেই তো আজ ও স্বপ্ন খুজে পাইনি!
আমি এখনো কোনো কুয়াশার ফাঁদে বন্দী
আমার এখনো হয়নি জীবনের সাথে সন্ধি।
হয়ত হয়েছি কোন হ্ণদয়ে ফোটা বিষ কাঁটা
তাইতো কারো চোখের শিশিরে পা জড়িয়ে হাটা..

Saturday 27 September 2014

বসন্তের আগে আরেকবার এসেছিল বসন্ত
হিমেল হাওয়ার রুক্ষতায় এক হৃদয়ের আশ্রয়ে ছিল কোমলতা।
বিধি শাসিত সমাজের আড়ালে ছিল গুচ্ছ অনুভূতির কুটির,
দিনান্তের ক্লান্তি ভুলিয়ে দিতো সে অনুভূতির উচ্ছাস।

অষ্টাদশীর আনাড়ী হ্ণদয় ভীষণ রকম মানবিক
তাই উদার আকাশ দখলে নিতে বাড়িয়ে ছিল হাত।
...
সেদিন শুষ্ক হৃদে ফোয়ারার জলে অনুভূতিরা সিক্ত হল
ভগ্ন হৃদয়ে বোকাসোকা কেউ খুব খুজেছিল আশ্রয়...

তারপর, প্রাপকহীন চিঠিগুলো প্রায়ই ডেকে বলে,
ভুল করে বসন্তের আগে আরেকবার এসেছিল বসন্ত...
৩০,১০,১৩


তবে চলুক এ লুকোচুরি,
অশ্রুমাখা হাতে টুপটাপ টাইপ হোক
অট্টহাসির ইমো।

তবে চলুক এ অতুলন অভিনয়,
মেকি মায়াদের চলুক বাহারী বিজ্ঞাপন।

তবে চলুক এ বাহাদুরী,
ব্যাকুলতা রয়ে যাক বর্ণচোরা কুশিলবের হ্ণদয়ে শুধু...

                      
কখনো চাঁদের সাথে আড়ি
মেঘের ফাঁকে লুকিয়ে রাখি ইচ্ছের বাড়াবাড়ি।
কখনো গল্প বলার ছলে
পাজরের ওপাশে লুকানো আবেগ আনমনে দেই বলে।
আমি ছন্নছাড়া মানুষ
তাই চোখের আলোয় নিত্য উড়াই হাজার রঙ্গের ফানুষ।
আমার স্বপ্ন দেখায় ভয়
প্রায়ই এখন স্বপ্নদের যে কবর দিতে হয়...
শ্যাওলা জমা স্বৃতিগুলোয়
অভিমানের মেঘ ধোয়া জল,
মনের আলোয় খুজে ফিরি
হারিয়ে ফেলা শেষ সম্বল।
হলদে রোদের ঝলকানিতে
বিন্দু শিশির চমকে ওঠে,
মন বদলের পুরান খেলায়
স্বপ্নের ওপর স্বপ্ন ফোটে...
কুৎসিত কংক্রিটে ঢাকা আকাশ
ক্লান্তিতে আচ্ছন্ন রাজপথ
যান্ত্রিক জটিলতায় স্থানচ্যুত মানবিক সারল্য
শিরায় শিরায় অনুভূতিরা ছুটে বেড়ায়না আর...
বেঁচে থাকার জন্য; বেঁচে থাকতে হবে বলে,
টুকরো টুকরো আবেগ ছুড়ে দিই সময়ের গহ্বরে।
তবুও শেষ-মেষ পথহারা কেউ, হেরে যাওয়া একজন।

কিংবা আধারে আশ্রিত জীব,
হয়ত জ্বোনাকী,
হয়ত কদাকার সরীসৃপ!

     ৩০,০৯,১৩
মেঘলা আকাশ অথবা ঝাপসা দৃষ্টি
খেয়ালি চোখে দেখা শেষ ট্রেনের প্রস্থান।
একমুখী রাস্তার কোণে ফোটা বুনোফুল
ভাঙ্গা বেঞ্চিতে বসা গন্তব্যহীন যাত্রী...
বৃষ্টি শেষে গোধুলিতে রংধনু
একান্ত হয় স্যাতস্যাতে কাঁদাজল
একান্ত হয় ভিজে আকাশ
তবু রয়ে যায় যাত্রীর শূণ্যতা।
উদাস দৃষ্টিতে নেই পথ হারাবার আফসোস
কিংবা ভ্রান্তির অনুতাপ,শুধুই প্রগাঢ় শূণ্যতা...

      ২৬,০৯,১৩