Sunday 28 September 2014

-আচ্ছা, তুই একটা অন্যরকম লেখা লিখতে পারবি?

-অন্যরকমটা কি রকম?
আমি হাসতে হাসতে বলি।

-অন্যরকম। একদম আলাদা...। নির্মল আবেগের না, বন্য প্রেমের না, কুৎসিত সমাজের না, কোনো অলিক স্বপ্নেরও না। আন্যকিছুর।

আমি হাসলাম।
-পৃথিবীতে সবাই স্রষ্টা হয়নারে, কেউ শুধুই অগ্রজের সৃষ্ট পথের শুদ্ধ চর্চার জন্য। একটা নতুন আবিষ্কারের জন্য যে অনিশ্চিত পথে বেরুতে হবে, তা সোনা খোঁজার মতই। অনুসন্ধানকারী থাকে উন্মাদ। কিন্তু শেষমেষ মারা যায় রাস্তার অনাহারী কুকুরের মত। খুব অল্পই খঁজে পায় কাংখিত জিনিস।
ওই পথে বেরুনোর দুঃসাহস নেই আমার। আমি ছাপোষা মানুষ, আষ্টে-পৃষ্ঠে বাঁধা সমাজের সস্তা নিয়মে।

-তবু, তোর মাঝে আমি দ্রোহ দেখতে পাই। তোর কবিত্বে নির্মলতার বাইরেও কিছু সত্য আছে...
তুই কি প্রাপ্তির জন্যই লিখিস? হারাতে ভয় পাস?

-কবি মাত্রই বিদ্রোহী সত্তার লালনকারী। কিন্তু ভেতরের অঙ্গারকে প্রজ্জলিত হতে সুযোগ দেবার মত দুঃসাহসী হয়না সবাই। আমি কেন লিখি জানিনা। হয়তো প্রাপ্তির লোভ আছে, তবে অপ্রাপ্তিতে আফসোস নেই। হারাতে ভয় পাইনা, হারানোর কিছু নেই বলে। তবে হারতে ভয় পাই; ক্ষুদ্র মানুষ হলেও...

-কবির আবার হার-জিত কিরে? কবিত্ব চিরায়ত। শতাব্দীর পর শতাব্দী টিকে থাকে সভ্যতা ছাড়িয়ে। কালের ঘুণপোকা তার কিচ্ছু ক্ষয় করতে পারেনা। তাহলে আর ভয় কিসে?

-কবির ভয় তো তার নিজেরই কবিত্বে! কবিত্ব কখনো কবির চেয়ে শক্তিশালী। মাকরসার নবজাতক যেমন নিজেরই মাকে খায়, তেমনি কবিত্বও কবিকে কুরে কুরে খায়। কবির পিছুটান শুধুই তার কবিতা। অজানা মোহে সব ভুলে তার কাছে ফিরে আসে। কিন্তু অবশেষে আপনসত্তাকে আর বাঁচাতে পারেনা। নিজের সৃষ্টির মাঝে বিলীন হয়ে যায়...

-বিলীন হয়ে যায়না, এর মাঝেই বেঁচে থাকে। কবিতার মাঝেই তো তার স্রষ্টার অমরত্ম! তার ভাবনার শেকড় তো তারই আবিষ্কৃত কথামালায়। কবি তো তার ছন্দ থেকে নিঃশ্বাস নেয়। তাই তো তাকে বাঁচিয়ে রাখে...

-হুম..., তা বটে, বিসর্জনের মাঝে বেঁচে থাকা। যেখানে কবির ইচ্ছে-অনিচ্ছে হয় অর্থহীন। বেঁচে থাকেনা, বাঁচিয়ে রাখে।

-তাই তো হয়। তাই তো নিয়ম। এবার বল, পারবি কিনা? লিখবি তো?!

-যদি কখনো খুঁজে পাই। যদি তা থেকে থাকে আমার ক্ষুদ্রতায়...

-আছে। আমি দেখেছি কি করে টগবগ করে ফুটছে ওটা তোর মাঝে।

-কি?
আমি সাগ্রহে জানতে চাই।

-নব্য বিপ্লবের ঔদ্ধত্য।
সে চকচকে চোখে বলে।

০৮,১২,১৩

No comments:

Post a Comment